আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে জামদানি উৎপাদন ও বাজারজাতে নতুন প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জামদানি ও পাটপণ্য নিয়ে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ‘বঙ্গবন্ধু বস্ত্র ও পাট জাদুঘর, জামদানি শিল্পের উন্নয়নে প্রদর্শনী কাম বিক্রয়কেন্দ্র এবং ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট স্থাপন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর ফলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জামদানি উৎপাদনে যেমন বৈচিত্র্য আনা হবে, তেমনি এ পণ্য দেশ ও বহির্বিশ্বে বাজারজাতের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড।
সম্প্রতি এ নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পিইসি কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পিইসি কমিটি প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা, আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ ও ডিজাইন যাচাই-বাছাই করাসহ বেশকিছু সুপারিশ করেছেন।
বিশ্বজুড়ে খ্যাতি থাকলেও জামদানির মেধাস্বত্ব নিয়ে প্রতিবেশী একটি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর সরকার জামদানিকে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন (জিআই) পণ্যের মর্যাদা দেয়। পরে বৈশ্বিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রোপারিটি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) জামদানিকে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জিআই এ পণ্যটি রক্ষায় বেশ আগে থেকেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করা হচ্ছিল। এখন উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়িয়ে জিআই এ পণ্য রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী প্রচারণার জোর দাবি উঠেছে। আর এ দাবিকে আমলে নিয়েই জামদানি শিল্পের গৌরবময় ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, জামদানি শিল্পের জন্য রূপগঞ্জে একটি আধুনিক পল্লী করা হবে। সে খাতে জামদানি বোনায় এমন কারিগরদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একই রকম ৫০টি ডুপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব বাসার দ্বিতীয় তলার দুটি ইউনিটে দুজন বয়নশিল্পীর পরিবার বসবাস করবে। আর নিজের দুটি ইউনিটে তাদের তাঁত বসানো থাকবে। এ ভিলেজটি এমনভাবে বানানো হবে, যাতে করে এটি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় হয়। ভিলেজে জামদানি হাট বসানোর জন্য একটি চমৎকার জায়গাও থাকবে। এখন রূপগঞ্জের নোয়াপাড়ায় যেখানে জামদানি পল্লী রয়েছে।
তিনি বলেন, যারা দূর থেকে সেখানে যাবেন, তারা শুধু কেনাকাটার জন্যই যাবেন। কীভাবে জামদানি তৈরি হয়, সেগুলো ঘুরে ঘুরে দেখবেন, কিছুটা মানসিক প্রশান্তি বা বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলেই পর্যটকরা যাবেন। তাই নতুনভাবে যে পল্লী গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি সেটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব, গাড়ি রাখার পার্ক থাকবে, ভালোমানের হোটেল-রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা থাকবে। যাতে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা সেখানে গিয়ে হতাশ না হন। এটা যদি সফল হয় তাহলে জামদানির উন্নয়নে আমরা আরো প্রকল্প গ্রহণ করব। এসব বাসা বরাদ্দ পেতে বয়নশিল্পীদের কত টাকা দিতে হবে, এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে অল্প পরিমাণ টাকা দিতে হবে, যা হবে খুব সহনীয় পর্যায়ে ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, জামদানি আমাদের গৌরবের পণ্য। বর্তমানে স্বল্প পরিসরে জামদানি রফতানিও হয়। কিন্তু দেশে-বিদেশে এর বিশাল বাজার রয়েছে। তাই এ শিল্পের উন্নয়নে আমরা চেষ্টা করছি। এর ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে জামদানির বাজারজাতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রদর্শনীতে জামদানি প্রদর্শনের পাশাপাশি এর গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করবে সরকার।
প্রাচীন কৌশলের তাঁত অর্থাৎ পিট লুম বা গর্ত তাঁতে বোনা হয় পৃথিবীর অন্যতম ধ্রুপদি বস্ত্র, জামদানি। বাহারি নকশা ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে জামদানি শাড়ির বেশ কদর রয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বহু দেশেও রয়েছে এর চাহিদা। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বর্তমানে এ শিল্পে অনেকটা ধস নেমেছে। দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী পণ্যটি। আর বয়নশিল্পীরা জীবিকার তাগিদে ছুটছেন অন্য পেশায়। অথচ তাদের পূর্বপুরুষরাই একসময় বুনেছেন বিশ্বের বিস্ময়বস্ত্র মসলিন। তবে কিছু বয়নশিল্পী এখনো ধারণ করে চলেছেন সমৃদ্ধ বয়ন-ইতিহাসের পরম্পরা। বুনছেন মসলিনের উত্তরসূরি জামদানি।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শুধু নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রায় দুই হাজার তাঁত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ৮০০ পরিবার। এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে তাঁতপ্রতি ৬০ হাজার টাকা করে ঋণ দিচ্ছে সরকার। এ ঋণে মাত্র ৪ শতাংশ সুদ দিতে হয়। আর ১ শতাংশ দিতে হয় তাদেরই জন্য গঠিত কল্যাণ তহবিলে, যা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা থাকবে। তার পরও এসব তাঁতিকে কঠিন শর্তে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ কার্যক্রম চালাতে হয়।